প্রথম পাতা

আমলা-কূটনীতিকে ভরসা নেই বিএনপির

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০১৫

নুসরাত জাহান

সদ্য পদত্যাগী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী দলের হয়ে বন্ধু ভাবাপন্ন রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যোগযোগ রাখতেন। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রশ্নে প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে লবিইং করার বড় দায়িত্ব ছিল তার ওপর। বিশেষত পার্শ্ববর্তী একটি দেশের সঙ্গে দূতিয়ালি করার জন্য শমসের মবিন চৌধুরীর ওপর ভরসা করেছিল বিএনপি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নির্বিঘ্নে শেষ করে। এ সময় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একা হয়ে পড়ে বিএনপি। দলটি প্রভাবশীল রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, বিএনপির লবিইস্ট গ্রুপ দুর্বল হওয়ায় বিদেশিদের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপির এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে দলটির আন্তর্জাতিক লবিইংয়ের জন্য এখন নতুনমুখ খোঁজা হচ্ছে। এবার সাবেক আমলা ও কূটনৈতিকদের ওপর দলটি  আস্থা রাখতে চাইছে না আর। রাজনীতিকরাই থাকবেন ওই দায়িত্বে।
বিএনপির থেকে ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী পদত্যাগ করার পর আন্তর্জাতিক লবিইংয়ের বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে। দলটির নেতারা জানান, বিএনপির কূটনৈতিক বিষয়াদি দেখার জন্য বেশ কয়েক সিনিয়র নেতা কাজ করেন। একেকজনকে একেকভাবে দায়িত্ব দেয়া রয়েছে। শমসের মবিন চৌধুরী সামগ্রিকভাবে বিষয়গুলো সমন্বয় করতেন। এখন তার স্থানে দলের আরেক নেতাকে দায়িত্বে দেয়া হবে। তবে এবার আমলা নির্ভরতা কমিয়ে রাজনীতিবিদদের সামনে কাতারে আনা হবে। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শে আন্তর্জাতিক লবিইংয়ের নেতৃত্ব গোছানোর কাজ চলছে।
এ ব্যাপারে সম্প্রতি ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমে বলেছেন, শমসের মবিন চলে যাওয়ায় দলের বড় ক্ষতি হবে না। বিএনপি একটি বড় দল, তিনবার ক্ষমতায় ছিল। বিএনপিতে অনেক কূটনীতিক রয়েছেন। তাই দলের কার্যক্রমে তার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই।
জানা গেছে, দলের হাই কমান্ড শমসের মবিন চৌধুরীর ওপর নাখোশ ছিল। এর অন্যতম কারণ হলো, ২০১৩ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎ না হওয়া, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে ভারতসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর কাছে বিএনপির চাওয়া পৌঁছে দিতে না পারা, ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে পারেননি শমসের মবিন চৌধুরী।
বিএনপি সূত্র জানায়, দলটির কূটনৈতিক বিষয়গুলো দেখাশোনা যারা করেন তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। তাদের মধ্যে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক বিষয়াদি দেখেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান। ড. মোশাররফ বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর মামলায় জেলে। ফলে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন মাহবুবুর রহমান। ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ রক্ষা করেন তরিকুল ইসলাম। তিনি অসুস্থ থাকায় অনেকটা নিষ্ক্রিয় অবস্থানে রয়েছেন। অন্যদিকে শমসের মবিন চৌধুরী নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার পর ড. আবদুল মঈন খান বিএনপির কূটনৈতিক বিষয়াদির সমন্বয় করছেন। এছাড়া নজরুল ইসলাম খান মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন।
বর্তমানে বিএনপির কূটনেতিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আবদুল আউয়াল মিন্টু। ড. ওসমান ফারুক যুক্তরাষ্ট্র সফরে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছাড়াও জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিবসহ বেশ কয়েক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আবদুল আউয়াল মিন্টু যোগাযোগ রাখছেন। এছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুশফিকুর রহমান, ইনাম আহমেদ চৌধুরীর কূটনৈতিক তৎপরতায় সক্রিয় রয়েছেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh