মুক্তকথা

পর্ব-৩

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০১৫

মোস্তফা সোহেল

অনেকদিন পর নিঃশব্দ নীরবতা। রিমঝিম বৃষ্টির শব্দ। দূরে কোথাও পাখির কলতান। খানিকটা ঘোর। স্বপ্নময়তা। এ রকম দিনে নওশীনের মনটা কী রকম উদাস হয়ে থাকে। হেলাল হাফিজ-এর কবিতা তখন একাকী সঙ্গী হয়ে ওঠে দারুণ।
‘এই নাও বাম হাত তোমাকে দিলাম।
একটু আদর করে রেখো, চৈত্রে বোশেখে...’
ফোনের শব্দে ঘোর কাটে। তাকিয়ে দেখে হাসান। নওশীন, কী করছ?
মন ভালো নেই। দীপন হত্যা, শুদ্বস্বর-এর প্রকাশক টুটুলসহ আরো দু’জনের ওপর হামলা, পুলিশের ওপর হামলা এবং সাভারে পুলিশ হত্যা- সব মিলিয়ে মনটা অশান্ত। একা একা কবিতা পড়ছিলাম। রিলিফ দরকার।
শুধু কবিতা পড়ে কি রিলিফ পাওয়া যাবে? এর চেয়ে চল মন খুলে আড্ডায় বসি।
ভালো আইডিয়া। কিন্তু রাজনীতি নিয়ে আদৌ কি মন ভালো হবে কোনোদিন?
তুমি কি জানো, কানাডায় ৭০ শতাংশ বাংলাদেশি কানাডিয়ান মূলধারার রাজনীতিতে নিঃষ্পৃহ, ১৫ শতাংশ গত ১০ বছরে একবারও ভোটাধিকার প্রয়োগ করেননি। টরন্টোভিত্তিক প্রগ্রেসিভ অ্যাকশন ফর কমিউনিটি এম্পাওয়ারমেন্ট (পেস)-এর জরিপে ওই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
কারণ জানা গেছে?
হ্যাঁ। কারণ হিসেবে ব্যস্ততা, রাজনীতির প্রতি নির্লিপ্ততা, আত্মকেন্দ্রিকতা ইত্যাদি উঠে এসেছে।
তোমাদের এবারের নির্বাচনের রেজাল্ট কী?
গত ১৯ অক্টোবরের নির্বাচনে বিশাল জয় পেয়েছে জাস্টিন ট্রুডো-র বিরোধী দল ‘লিবারেল পার্টি’। কনজারভেটিভ পার্টির দীর্ঘ ৯ বছরের শাসনের অবসান ঘটতে যাচ্ছে।
ট্রুডোর দল ১৯১টি আসনে জয় পেয়েছে। আর চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা স্টিফেন হারপার জিতেছেন ১০৪টি আসনে। নিউ ডেমক্রেটিক পার্টি পেয়েছে ৫৪টি আসন।
ধন্যবাদ। আপডেট পেলাম তোমার কাছ থেকে। কিন্তু আমার মনটা খচখচ করছে।
নওশীন বলে, কেন এ রকম লাগছে? দেশের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না, তাই? হাসান হাসে। উৎসাহ নিয়ে বলে, বিরোধী দল এখানে চলতি সপ্তাহে আরও একটি ভুল করলো।
কী রকম?
সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়ার পরিবার থেকে যে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল এতে বিএনপির পক্ষ থেকে কেউই উপস্থিত থাকেননি। এটি বেশ অস্বস্তিকর নয় কি?
ঠিক। রাজনীতি এতো জটিল ক্যালকুলেশনের বিষয় যে, প্রতিটি মুহূর্ত খুব হিসাব-নিকাশ করে এগোতে হয়। তা না হলে অবস্থাটা কৌতুককর হয়ে উঠবে। শুনবে নাকি একটা কৌতুক?
প্লিজ, বলো।
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমান ক্র্যাশ করছে। যাত্রী মোট চারজন। একজন পাইলট, একজন নেতা, একজন শিক্ষক, অপরজন ছাত্র। বিমানে প্যারাসুট আছে তিনটি। একটি প্যারাসুট নিয়ে পাইলট বললো, ‘আমি লাফিয়ে পড়ছি। আমাকে তাড়াতাড়ি রিপোর্ট করতে হবে যে, বিমান ক্র্যাশ করছে।’ নেতা একটি প্যারাসুট নিয়ে লাফ দেয়ার সময় বললেন, ‘দেশ ও জাতির জন্য আমার অনেক কিছু করার এখনো বাকি। তাই আমার বেঁচে থাকা দরকার।’ অবশিষ্ট যাত্রী দু’জন শিক্ষক ও ছাত্র। শিক্ষক বললেন, ‘ওরা তো দুটি নিয়ে গেল। এখন প্যারাসুট আছে একটি। তুমি ছোট, তোমার দীর্ঘ জীবন সামনে। তুমিই ওটা নিয়ে নেমে যাও।’
ছাত্র, ‘স্যার, এর আর দরকার নেই। প্যারাসুট এখনো দুটি আছে। কারণ নেতা সাহেব তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে প্যারাসুট মনে কইরা আমার ব্যাগ নিয়ে লাফ দিয়েছেন।’ নওশীন হাসতে হাসতে ফোন ছাড়লো।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh