
মানুষের শরীরে মেরুদণ্ডের নিচের দিকে ৩-৫টি ছোট কশেরুকা থাকে যেগুলোকে একত্রে বলে কক্কিক্স। বসতে গেলে অথবা বসা থেকে উঠতে গেলে যদি ওই হাড়ে ব্যথা হয় তাহলে সেটিই হলো কক্কিডাইনিয়া। এ রোগ যে কোনো বয়সে হতে পারে। তবে ৪০ ও এর চেয়ে বেশি বয়সী মানুষের বেশি হয়ে থাকে।
কেন এটি হয়
-কক্কিক্স বা এর আশপাশের মাংসপেশিতে আঘাত পেলে কক্কিডাইনিয়া হয়।
-সন্তান প্রসবের সময় দীর্ঘ ও কষ্টকর হলে।
-কক্কিক্সের গঠনগত কারণে।
-ডিস্কে ক্ষয়জনিত কারণে।
-কক্কিক্সে টিবি অথবা টিউমার হলে।
কাদের বেশি হয়
পুরুষদের থেকে নারীদের ৪-৫ গুণ বেশি হয়। নারীদের মধ্যে আবার একটু স্থূলকায়ারা বেশি ভোগেন।
রোগ নির্ণয়
রোগ নির্ণয়ের জন্য খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার হয় না। রোগের ইতিহাস বিস্তারিত জানা থাকলে শুধু ডায়নামিক এক্স-রে করেই রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে রোগের কারণ নির্ধারণের জন্য কখনো কখনো বোন স্ক্যান, এমআরআই ইত্যাদির প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসা
যেহেতু স্বাভাবিকভাবে ওই রোগ খুব একটা খারাপ পরিণতির দিকে যায় না সেহেতু সাজারি ছাড়া চিকিৎসাটিই উপযুক্ত পদ্ধতি ধরা হয়। এক্ষেত্রে যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হয় এর মধ্যে রয়েছে লিডোকেইন ক্রিম বা জেল, ল্যাক্সেটিভস, এসিটামিনোফেন বা এনএসএআইডস ইত্যাদি।
পুনর্বাসন
-অর্গানোমিক অ্যাডাপটেশন বা বসার সময় কক্কিক্সের ওপর চাপ কমানোর জন্য ডোনাট কুশন ব্যবহার।
-জীবনযাত্রার পরিবর্তন যেমন- সাইক্লিং, যে কোনো কন্টাক্ট স্পোর্টস পরিহার করা।
-ফিজিক্যাল থেরাপির মধ্যে পেলভিক মাসাজ ও ম্যানিপুলেশন, পেলভিক রিলাক্সেশন টেকনিক, পেলভিক ফ্লোর স্ট্রেন্থেনিং এক্সারসাইজ, পেলভিক জয়েন্ট মবিলাইজেশন ও পোসচুরাল কারেকশন।
-মানসিক সাপোর্ট।
ইন্টারভেনশন ফিজিয়াট্রি
-স্টেরয়েড ইনজেকশন কক্কিক্স ও স্যাক্রো কক্কিজিয়াল লিগামেন্টে দিলে ব্যথা ভালো হয়।
-বটুলনাম টক্সিন ইনজেকশন।
-প্রলোথেরাপি।
-গ্যাংগ্লিয়ন ইম্পার নার্ভ ব্লক।
-রেডিওফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন।
শল্যচিকিৎসা
সাধারণত কনজারভেটিভ চিকিৎসায় রোগীরা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যান। এরপরও যদি তিনি সুস্থ না হন তাহলে আংশিক অথবা সম্পূর্ণ কক্কিজেক্টমি নামক অপারেশন করা হয়।
কাকে দেখাবেন
ওই রোগের চিকিৎসা অবশ্যই ফিজিয়াট্রিস্ট যিনি ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ তার তত্ত্বাবধানে হতে হবে। ইন্টারভেনশন ফিজিয়াট্রি একটি নতুন ও অত্যাধুনিক বিশেষায়িত চিকিৎসা ব্যবস্থা যা দক্ষ ফিজিয়াট্রিস্ট ছাড়া অন্যদের পক্ষে দেয়া সম্ভপর নয়।
ডা. মোহাম্মদ ইসরাত হাসান
ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।