আন্তর্জাতিক

রাহুলের ওপর ভাগ্য ঝুলছে কংগ্রেসের

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০১৫

সেলিম সারোয়ার

ভারতের গুরুত্বপূর্ণ বিহার রাজ্যের নির্বাচনী ফল ইতোমধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের জানা। বিজেপি-র সম্ভাব্য বিজয় সেখানে রোধ করা গেছে। তবে এই কৃতিত্ব নীতিশ কুমার ও লালুপ্রসাদ যাদবের। যদিও কংগ্রেস বেশ কিছু আসন পেয়েছে কিন্তু তা লালু-নীতিশ জোটে ঢোকার কারণেই। ফলে কংগ্রেসের আত্মপ্রসাদের কিছু নেই।
ভারতে কংগ্রেসের অবস্থা এখন কতোটা করুণ তা গত জাতীয় নির্বাচনে প্রমাণিত। লোকসভায় ৫৪৩টি আসনে তারা ৪৪টি পেয়েছে যা ১০ শতাংশেরও নিচে। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, দলটি ওই পরাজয়ের ১৮ মাস পরও উঠে দাঁড়াতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর মধ্যে দেশটিতে যতো প্রদেশভিত্তিক নির্বাচন হয়েছে এর কোনোটিতে কংগ্রেস এককভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। দিল্লিতে তারা একটি আসনও পায়নি। অথচ গত দশকে একনাগাড়ে তারা এখানে শাসক ছিল।
১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশটির সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল কংগ্রেস। কিন্তু বর্তমানে ভারতে তারা ক্ষমতায় আছে ২৯টি প্রদেশের মধ্যে ১০টিতে। এগুলোর অনেকটিতে স্রেফ কোয়ালিশন পার্টনার তারা।
শুধু যে কেন্দ্রে বিজেপির কাছে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব হারিয়েছে দলটি তা নয়, তাদের এককালের মধ্য-বাম এজেন্ডাও হাইজ্যাক হয়ে গেছে আমআদমি পার্টির মতো দলের কাছে। আমআদমি পার্টি এখন সামাজিক ইস্যুগুলোয় মধ্য-বাম ঘরানায় চ্যাম্পিয়ন শক্তি।
এটি সত্য, এককভাবে হোক বা জোটগতভাবে হোক- স্বাধীন ভারতের গত ৬৮ বছরের মধ্য ৫৪ বছর কংগ্রেস দেশটি শাসন করেছে এবং পরাজিত হওয়ার পর তার ফিরে আসার একাধিক রেকর্ডও রয়েছে। ১৯৭৭ ও ১৯৮০ সালে তারা অনেক বিপর্যয় পেরিয়ে আবার রাজত্ব ফিরে পেয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ কংগ্রেস সরকার যেভাবে সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিল তা এখনো ভারতীয়দের মনে দগদগে ঘা হয়ে আছে। ১৮ মাস আগে পরাজিত হওয়ার পর থেকে কংগ্রেসের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই পরাজয়ের কারণ খোঁজার একটা তাগিদ দেখা গেছে। কিন্তু সবাই এ জন্য প্রকাশ্য বা গোপনে দুষছেন দলটির তরুণ নেতা রাহুল্য গান্ধীর ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বগুণের অভাবকে। কেউই বলছেন না, আরএসএস-বিজেপি পরিবারের উগ্র জাতীয়তাবাদের বিপরীতে কংগ্রেসের রাজনৈতিক দর্শনগত দেউলিয়াত্বও বিপুল। তার নিজস্ব কোনো বিকল্প যুগোপযোগী রাজনৈতিক স্পষ্ট অবস্থান নেই এখন। শুধু মূলধারার হিন্দুরাই নন- মুসলমান, দলিত, শিখ, খ্রিস্টানরাও কংগ্রেসের ওপর এখন ভরসা করতে পারছেন কমই। উপরন্তু সাংগঠনিক বড় ধরনের সংকট রয়েছে দলটিতে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের সব ক্ষমতা এখনো একটি পরিবারকেন্দ্রিক।
রাহুলের সমালোচকরা তার অন্তত তিনটি ত্রুটির কথা বলে থাকেন। এগুলো হলো প্রথমত, তাকে রাজনীতিতে কখনো সিরিয়াস মনে হয়নি। দ্বিতীয়ত, তিনি মোটেই ভালো বক্তা নন। তার বক্তব্য শুনলে মনে হয় আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিতে ভুগছেন। তৃতীয়ত, প্রশাসনিক বিষয়ে তার অভিজ্ঞতাহীনতা, এমনকি পার্লামেন্টেও তার উপস্থিতি ৫০ শতাংশের কম।
যদিও সোনিয়া গান্ধী এখনো কংগ্রেসের সভাপতি তবুও সহ-সভাপতি হিসেবে রাহুলের ঘুরে দাঁড়ানোর ওপরই কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানো নির্ভর করছে বলে মনে করেন ভারতীয় অধিকাংশ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh