রুশ বিমানটি আইএসের শিকার হয়েছিল?
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০১৫
মনিরুল ইসলাম

মিসরের সিনাই অঞ্চলে বিধ্বস্ত রাশিয়ার যাত্রীবাহী বিমানটি বোমা হামলার শিকার হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্ত এবং উড়োজাহাজটির ব্ল্যাকবক্সের আওয়াজ বিশ্লেষণের পর বিশেষজ্ঞরা ওই ধারণা করছেন। গত রোবরার যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞদের একজন সিএনএন-কে বলেন, উড়োজাহাজটি যে বোমা হামলার শিকার এ ব্যাপারে তিনি ৯৯.৯ শতাংশ নিশ্চিত।
মিসরের সিনাই উপত্যকার লোহিত সাগরের তীরবর্তী বিখ্যাত অবকাশযাপন কেন্দ্র শারম আল শেখ থেকে বিমানটি উড্ডয়নের ২৩ মিনিট পর উপত্যকার পার্বত্য হাসানা এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। রুশ বিমান সংস্থা কোগালিমাভিয়া এয়ারলাইস-এর উড়োজাহাজটি রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে যাচ্ছিল। এতে উড়োজাহাজটির সাত ক্রুসহ ২২৪ আরোহীর সবাই নিহত হন। নিহত ২১৭ যাত্রীর ২১৪ জনই রাশিয়ার নাগরিক। বাকি তিনজন ইউক্রেনিয়ান।
উড়োজাহাজটি ক্ষেপণাস্ত্র বা বোমা হামলায় বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে বলে যে খবর বেরিয়েছিল, মিসর ও রাশিয়া শুরু থেকে তা উড়িয়ে দেয়। কিন্তু বিশ্লেষকরা জানান, বিধ্বস্ত হওয়ার আগে কিছু আকস্মিক শব্দ শোনা যায়। এ থেকে তারা ধারণা করেন, উড়োজাহাজটিতে রাখা কোনো বোমার কারণে ওই বিস্ফোরণ হয়। এর আগে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে কারিগরি ত্রুটি ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, খারাপ আবহাওয়ার মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করা হচ্ছিল। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কারিগরি ত্রুটির বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে বিমান সংস্থা কোগালিমাভিয়া এয়ারলাইস। তবে ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করা হয়েছেÑ এমন আশঙ্কা খুব একটা হালে পানি পাচ্ছে না। কারণ বিধ্বস্ত হওয়ার আগ মুহূর্তে বিমানটি ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০ হাজার মিটার উঁচুতে ছিল। বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ, বিমানটি কোনো বিস্ফোরকজাত পদার্থ দিয়েই বিধ্বস্ত করা হয়।
কারা দায়ী
উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর পরই মধ্যপ্রাচ্যের ইরাক ও সিরিয়ায় সক্রিয় ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ওই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে। তবে কীভাবে তারা বিমানটি বিধ্বস্ত করেছে এ ব্যাপারে পরিষ্কার করে কিছু জানায়নি। এক অডিও বার্তায় সংস্থাটি জানায়, সিনাই উপত্যকায় তাদের শাখা ওই হামলা চালিয়েছে। প্রথম দিকে মিসর ও রাশিয়া- উভয় দেশ আইএস-এর দাবিটিকে নাকচ করে দেয়। এখন বিধ্বস্ত বিমানের ব্ল্যাকবক্সের তথ্য-উপাত্ত ও বিধ্বস্ত হওয়ার ধরন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।
রাশিয়ান বিমান কেন হামলার লক্ষ্যবস্তু
এর আগে আইএসের হামলার মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির পশ্চিমা মিত্ররা। গত অক্টোবর রাশিয়া সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের সরকারকে সহায়তার অংশ হিসেবে আইএসসহ অন্যান্য সরকার বিরোধী বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলা শুরু করে। এতে আইএসের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এরপরই আইএস তার অনুসারীদের পৃথিবীর যে কোনো স্থানে রাশিয়ার স্বার্থের ওপর আঘাত হানার আহ্বান জানায়। তাই মিসরে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানে হামলার জন্য আইএসের দিকেই ইঙ্গিত করা হচ্ছে।
সিনাইয়ে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন
মিসরের সিনাই উপত্যকায় একটি জঙ্গি সংগঠন ‘আইএস সিনাই শাখা’ সক্রিয় রয়েছে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর ‘আনসার বাইত আল মাকদিস’ নামে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১৪ সালের নভেম্বর এটি আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। মিসরীয় সেনাবাহিনী মূলত ওই জঙ্গি সংগঠনের প্রধান লক্ষ্যবস্তু। আরো একটি জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল জুদ’ ২০১১ সাল থেকে সিনাই উপত্যকায় সক্রিয় রয়েছে। তারা অপর ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার সঙ্গে সংযুক্ত।