
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের কাইউক-ফাইয়ুর গ্যাসফিল্ড থেকে শুরু হয়ে চীনের স্থলবেষ্টিত ইউনান প্রদেশের মধ্য দিয়ে গুয়াংচি প্রদেশের গুইগাং পর্যন্ত একটি পাইপলাইন যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়।
পাইপলাইনের এই প্রজেক্টটি চীন প্রথম প্রস্তাব করে ২০০৪ সালে এবং পরিকল্পনা পরিপূর্ণতা পায় ২০০৭ সালে। এতে দুটি সমান্তরাল লাইন রয়েছে। একটি মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা তেলের জন্য। এর ধারণ ক্ষমতা ২২ মিলিয়ন টন। আরেকটি হচ্ছে মিয়ানমারে উত্তোলিত গ্যাস। এর আনুমানিক ধারণ ক্ষমতা ১২ বিলিয়ন কিউবিক মিটার। দুটি পাইপলাইনই ৭৩৯ কিলোমিটার (৪৫৯ মাইল) লম্বা।
২০১৩ সালের ২৮ জুলাই মিয়ানমার থেকে চীন পর্যন্ত প্রাকৃতিক গ্যাস যেতে শুরু করে। তখনো চীনের গুয়াংচি প্রদেশ পর্যন্ত পাইপলাইনের কাজ শেষ হয়নি এবং প্রাথমিকভাবে গ্যাসের সাপ্লাই ছিল বেশ কম। এ সময়ই শান স্টেট ও কাচিন স্টেটের মধ্য দিয়ে পাইপলাইনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয় ওই দুই প্রদেশের স্বাধীনতাকামীদের তরফ থেকে।
বেইজিং ওই প্রজেক্টটি নিয়েছিল ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে জ্বালানির ব্যাপক চাহিদা মেটানোর উদ্দেশ্যে। চীন মোটের ওপর বছরে ১৪৫.৯ বিলিয়ন কিলোমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে এবং ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির পূর্বাভাসে এটি ২০২০ সাল নাগাদ ২০০ বিলিয়ন কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাবে যেখানে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ঘাটতি থাকবে বছরে ৮০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার। চীন-মিয়ানমার পাইপলাইনে সরবরাহ করা গ্যাস চীনের পুরো চাহিদার তুলনায় সামান্য হলেও এটি চীনের এলাকাভিত্তিক চাহিদার জন্য এবং পুরো দেশের জ্বালানি উৎসের বৈচিত্র্য বাড়ানোয় অতি গুরুত্বপূর্ণ। আপাতত ওই গ্যাস চীনের ইউনান ও গুয়াংচি প্রদেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কাজে লাগবে এবং পরবর্তীকালে তা পূর্ব-পশ্চিম পাইপলাইনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে চীনের উপকূলের কাছাকাছি এলাকার অর্থনীতিকে সহায়তা করবে।
চীন তার জ্বালানি নিরাপত্তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে পেরেছিল মিয়ানমার বহির্বিশ্ব থেকে আলাদা থাকার কারণে যা বেইজিংকে মিয়ানমারের ভেতরে নিজেকে শক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করেছে। তখন মিয়ানমারকে নিয়ে বেইজিংয়ের কৌশল ছিল ছোট্ট সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং তারল্য সংকটে থাকা ওই দেশে সরাসরি বিনিয়োগ ব্যবহার করার ওপর। কিন্তু সামরিক জান্তাকে বেইজিংয়ের পৃষ্ঠপোষকতার কৌশল আগের মতো আর কাজ করছে না। ২০১০ সালে রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় থেকে নেইপিদাউয়ে বিরোধী মতের আবির্ভাব হয়েছে। সাংবিধানিক সংকীর্ণতার কারণে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল থাকার পরও এই দলগুলো চীনা বিনিয়োগকে জাতীয় বিতর্কের কেন্দ্রে এনে বেইজিংয়ের সঙ্গে নেইপিদাউয়ের বন্ধুত্বকে প্রকাশ্যে সমালোচনা করছে। চলতি নির্বাচনের পর এটা আরও বাড়বে।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে বেইজিংয়ের মিতসোন-এ পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প (ইউনান প্রদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতো) স্থগিত করে চীনকে প্রত্যাখ্যানের একটা বিরাট সাহস দেখান নেইপিদাউ। এটি ছিল মিয়ানমারের রাজনৈতিক বিরোধীদের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ছাড়। তারা নির্বাসনে থাকার সময় গ্রামের মানুষের বাসস্থান হারানো, পরিবেশগত বিপর্যয় ও অন্যান্য কারণ দেখিয়ে প্রধান কিছু উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করার জন্য বলছিল। ওই অভিযোগগুলো পাইপলাইন প্রকল্পের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে মনে করে বেইজিং তার কৌশল পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে এবং বিরোধী দলগুলো ও সেখানকার জনগণের দিকে হাত প্রসারিত করেছে যারা নিজেদের হিস্যা বুঝে নিয়েই কেবল পাইপলাইন প্রকল্প এগোতে দিতে চায়। স্বাভাবিকভাবে এটি এমন এক ইস্যু যা স্থানীয় রাজনীতিতে আবেদন সৃষ্টি করেছে এবং চীনের জন্য তা মোটেই সুখকর নয়। এই পাইপলাইন প্রকল্প মিয়ানমারে চীন বিরোধী মনোভাব বাড়িয়ে তুলতে ভূমিকা রাখছে।