শিক্ষাঙ্গন

কমে যাচ্ছে বিজ্ঞান শিক্ষার্থী

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০১৫

আহমেদুল মজিদ

‘প্রাথমিক স্তর থেকেই বিজ্ঞান শিক্ষাটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। বিজ্ঞান শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি শিক্ষা ও মানবিক শিক্ষার যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে তা শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরতে হবে’- এটি জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ১৯৮৮ সালে এসএসসি-তে মোট শিক্ষার্থীর ৪১.৩৫ শতাংশ ছিল বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী, ২০০৮ সালে এই হার দাঁড়ায় ২৫.৪০ শতাংশ। ১৯৯০ সালে এইচএসসি-তে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী ছিল ২৮.১৩ শতাংশ, ২০০৮ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১৯.৪১ শতাংশ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৩ সালে স্নাতক পর্যায়ে বিএসসি শিক্ষার্থী ছিল মোট শিক্ষার্থীর ৫.৪ শতাংশ, ১৯৯৫ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৪.৯ শতাংশে। ২০০৯ সালে ২১ লাখ ৯০ হাজার ৪৫৪ শিক্ষার্থী নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে মাত্র ২ লাখ ৯ হাজার ২০১ জন বিজ্ঞান বিভাগ নিয়েছে। এটি মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ৯.৫ শতাংশ।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি আগ্রহ কমার বহুবিধ কারণ। যেমনÑ পাঠ্যবই আকর্ষণীয় নয়, পাঠদান পদ্ধতি আকর্ষণীয় নয়, শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনে কৌতূহলী করে তোলা হয় না,  বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা হয় না, শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই ছাড়া কিছুই পৌঁছায় না। এছাড়া রয়েছে, প্রাইভেট খরচ বেশি, প্রাইভেট পড়তে হয়, পরীক্ষায় পাস করা কঠিন, চাকরির সুযোগ সীমিত ইত্যাদি কথা। এর পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইব্রাহিম প্রশ্ন তুলেছেন বিজ্ঞান শিক্ষার মান নিয়েও। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে বিজ্ঞান শিক্ষা আকর্ষণীয় নয়, আনন্দদায়ক নয়, উদ্ভাবনের যে আনন্দ তা শিক্ষার্থী পায় না। তাহলে আকৃষ্ট হবে কীভাবে?’
বিজ্ঞ মহল এটিকে বিজ্ঞানের দুষ্ট চক্র বলে অবহিত করছেন। আজ ভালো শিক্ষকের অভাবে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী কমলে আগামীতে ভালো শিক্ষকের অভাব আরো প্রকট হবে। অথচ সরকার ঘোষণা দিয়েছে ২০২১ নাগাদ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার।
বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে ব্যর্থতা
এদিকে প্রশ্ন উঠেছে, আমরা কী বিজ্ঞানে পড়া অধিকাংশ শিক্ষার্থী চাই, নাকি বিজ্ঞানমনস্ক জাতি চাই? অধিকাংশ ব্যক্তিই মনে করেন, আমাদের বিজ্ঞানমনস্ক ও উদ্ভাবনী জাতিতে পরিণত হওয়া উচিত। প্রফেসর ড. মো. শামসুল হক বলেন, ‘আমি ৯ বছর একটি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ছিলাম। বেশ কয়েক ছাত্রের মধ্যে আসলেই বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ দেখেছি। আবার আমাদের ইউনিভার্সিটি লেভেলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে নতুন নতুন প্রজেক্ট নিয়ে অন্তহীন কৌতূহল দেখেছি। আমি বলবো, তারা প্রত্যেকেই গিফটেড।’
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ওই ব্যর্থতাটিকে গোটা জাতির ব্যর্থতা বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে নীরব সম্ভাবনা রয়েছে এর বিকাশ ঘটানো উচিত। কিন্তু তা না হয়ে নানানভাবে এর সম্ভাবনার আরো অবনমন হচ্ছে।’
আগ্রহ ব্যবসায় শিক্ষায়
বিজ্ঞান শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন এমন একটি প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রিডম ফাউন্ডেশন’-এর গবেষণার রিপোর্টে দেখা গেছে, ব্যবসায় শিক্ষায় ২০০১ সালের এসএসসি-তে পরীক্ষার্থী ছিল মোট পরীক্ষার্থীর ১৬.৫১ শতাংশ। এরপর ক্রমেই তা বেড়ে এখন ৩৪.৫৭ শতাংশে পৌঁছেছে। বলা হচ্ছে, মূলত জব সিকিউরিটির কারণেই ব্যবসায় শিক্ষায় পড়ায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। এ প্রসঙ্গে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শুধু বিজ্ঞান নয়- ইতিহাস পড়ানোটাও সচেতনভাবে কমিয়ে ফেলা হয়েছে। অথচ এগুলো শিক্ষার মৌলিক বিষয়।  বিজ্ঞান হলো কৌতূহল, উদ্ভাবন ও বোধশক্তির একটি বিষয়। এখানে কখনোই সেভাবে উপস্থাপন হয়নি তা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh