শেষ পাতা

যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় নাখোশ সরকার

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০১৫

মেহেদি চৌধুরী

দেশের বিভিন্ন স্থানে চোরাগোপ্তা হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্ট সরকার ও ক্ষমতাসীন দল। দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রী জানান, যুক্তরাষ্ট্র এ দেশে জঙ্গিবাদ দমনটি কঠিন করে তুলছে। সরকার দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিবাদ সফলতার সঙ্গে দমন করে এসেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক চোরগোপ্তা হামলা ও খুনের ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র এ দেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস) থাকার আশঙ্কার কথা তোলে। এ দেশে তাদের নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা জারি করে পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নাশকতার পেছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন। তারা ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র’ বলতে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রতি ইঙ্গিত করছেন। সরকারকে বেকায়দা ফেলার জন্যই যুক্তরাষ্ট্র এসব চোরাগোপ্তা খুনের ঘটনা ও জঙ্গিবাদের বিষয়কে ব্যবহার করছে বলেও মনে করেন দলটির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা।
গত রোববার নেদারল্যান্ডস সফর সম্পর্কে জাতিকে অবহিত করতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এসব বিষয়ে মন্তব্য করেন। সরকার বিরোধী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত আছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চক্রান্তকারীদের বহু পরিকল্পনা আছে। তারা আরো দূর যেতে চায়। এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে এ দেশের কতিপয় মানুষ সম্পৃক্ত।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আইএস আছে, জঙ্গি আছে- যদি এ ধরনের কিছু স্বীকার করানো যায় তাহলে তারা হামলে পড়তে পারে। প্রচণ্ড চাপ আছে, কেন স্বীকার করি না।’ জনগণের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যদি সচেতন না হই তাহলে সর্বনাশ হবে। সিরিয়া, ইরাক, মিসর, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মতো পরিবেশ বাংলাদেশে সৃষ্টি হোক তা আমাদের কারো কাছে কাম্য নয়।’
কয়েক বছর ধরেই সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নানান বিষয়ে সম্পর্কের টানাপড়েন দেখা যায়। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান ভালোভাবে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। এখন সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করাসহ বাংলাদেশটি অকার্যকর ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে দেখাতে চাইছে বলে মনে করে আওয়ামী লীগ। দলের নেতারা বলেন, আমরা এর চেয়েও অনেক বড় নাশকতা মোকাবেলা করেছি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবার আইএস ধুয়া তুলে আমাদের কাজ কঠিন করে তুলেছে। তারা সতর্কতা জারি করে আমাদের সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে দেখাতে চাইছে। ফলে নাশকতাকারীদের চেয়েও যুক্তরাষ্ট্রকে সামাল দিতে আমাদের বেশি বেগ পেতে হচ্ছে।    
যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা জারি প্রসঙ্গে গত ১৮ অক্টোবর সচিবালয়ে নিজ দফতরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার পুরোটা সময় যুক্তরাষ্ট্র একই আচরণ করে আসছে। এর খুব বেশি পরিবর্তন হবে বলে আমার মনে হয় না।’ তিনি আরো বলেন, ‘গত ৬ থেকে ৭ বছর ধরে মার্কিন নীতি আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল না।’ এদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, আইএস নয়Ñ সাম্প্রতিক নাশকতার সঙ্গে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি-জামায়াত সম্পৃক্ত। তারা সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করে একটি আগাম নির্বাচন আদায় করতে চায়। এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রও অবগত আছে। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী আইএস সৃষ্টি, মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তির মূলে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তান, আফগানিস্তানে মৌলবাদী শক্তিটিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। তাদের এ অবস্থানের বিষয়ে সারা বিশ্বই অবগত। তবে আমাদের দেশে জঙ্গিদের তারা পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে কি না এ বিষয়ে আমার কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।’
চীন-রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন
সরকার দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন থাকায় রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পথ বেচে নিয়েছে। চলতি বছরই বাংলাদেশ সফর করতে পারেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। এ প্রসঙ্গে গত শনিবার বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার এ. নিকোলেভ রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময় ও নির্ধারিত তারিখেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসবেনÑ এ কথাটির পুনরাবৃত্তি করতে চাই। পুতিনের সফরে বেশকিছু চুক্তিও হতে পারে।’
এছাড়া চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে সরকার। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী লি কে কিয়াংয়ের এ বছরেই পৃথকভাবে ঢাকা সফরের কথা রয়েছে। এক সপ্তাহ আগেই জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী চীন সফর করে এসেছেন। এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠক করেন। এ বছরের জুলাইয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে দলীয় একটি প্রতিনিধি দল চীন সফর করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর চীন সফর করেন। প্রধানমন্ত্রীর পরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ চীন সফর করেন। এ বছর চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন। এখন চীনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক এক নতুন মাত্রায় পৌঁছাবে বলে সরকার পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh