
বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ দিন ৭ নভেম্বর। ক্যু-পাল্টা ক্যুসহ নানান নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে ১৯৭৫ সালের এই দিনে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দিনটিকে স্মরণ করে। সবচেয়ে ঘটা করে উদযাপন করে বিএনপি। বর্তমানে বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশে থাকা দলটি ৭ নভেম্বরটি ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) পালন করে ‘সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ ও আওয়ামী লীগ ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে।
এ বছর ৭ নভেম্বর উপলক্ষে জাতীয় পত্রিকাগুলোয় কী রকম পরিবেশনা ছিল তা খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, গত কয়েক বছরের তুলনায় দিনটিকে নিয়ে এবারের কভারেজ ব্যাপকভাবে কম। একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত সংবাদের শিরোনাম, ভাষা ও ট্রিটমেন্ট অনেকটা বদলে গেছে।
৭ নভেম্বর দৈনিক প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, জনকণ্ঠ, যুগান্তর, সমকাল, কালের কণ্ঠ, নয়া দিগন্ত, ইনকিলাব, ইত্তেফাক, সংবাদ, ঢাকা ট্রিবিউন ও মানবজমিনÑ মোট ১১টি পত্রিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, এ বছর শুধু দৈনিক ইনকিলাবে সার্বিক কভারেজ ছিল ‘পুরোপুরি বিএনপিপন্থী’। ‘আজ ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ শিরোনামে প্রথম পাতায় দু’কলাম খবরের সঙ্গে ছিল সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বড় একটি ছবি। দিনটি উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিবৃতি ছাপা হয়েছে একই পাতায় তিন কলামে। ভেতরে এক পাতার ‘বিশেষ সংখ্যা’ও প্রকাশ করেছে পত্রিকাটি।
অন্যদিকে দৈনিক সংবাদ, জনকণ্ঠ ও প্রথম আলোর ভাষা ছিল বিপরীতধর্মীÑ শাসক দলের সঙ্গে মিলে যায় তা। দৈনিক সংবাদ-এর শিরোনাম ছিল, ‘আজ মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’। জনকণ্ঠ ও প্রথম আলো তাদের প্রতিবেদনে এমন একটি লাইন যোগ করেছে যেটি পুরো প্রতিবেদনে সরকারিকরণ ঘটিয়েছে। প্রথম আলো থেকে উদ্ধৃতি- “এ উপলক্ষে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পৃথক কর্মসূচি নিয়েছে। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দিবসটিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে।” অর্থাৎ এই কাগজ বুঝিয়েছে, দিনটিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন না করায় বিএনপিসহ অন্যান্য দল ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি’ নয়। জনকণ্ঠতেও একদম একই কথা লেখা হয়েছে।
প্রথম আলোর ২০১৩, ২০১০ ও ২০০৯ সালের এ সংক্রান্ত রিপোর্টগুলো দেখার সুযোগ হয়েছে। সেগুলোর ভাষা এ রকম ছিল না। শুধু ভাষায় নয়, কভারেজের দিক থেকেও দিনটি নিয়ে প্রথম আলো বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার বেশ ‘উদাসীন’ ছিল। ‘আজ ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বর’ শিরোনামে সংবাদটি ছাপা হয়েছে চতুর্থ পাতায় সিঙ্গেল কলামে। আগের বছরগুলোয় মূল সংবাদটি প্রথম বা শেষের পাতায় ছাপার পাশাপাশি একাধিক ‘বিশেষ লেখা’ থাকতো। যেমন ২০১০ ও ২০০৯ সালে চারটি করে বিশেষ লেখা-সাক্ষাৎকার ছিল।
যুগান্তরের এবারের শিরোনাম- ‘ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বর আজ’। শেষের পাতায় সিঙ্গেল কলামের ওই রিপোর্টের পাশে খালেদা জিয়ার বিবৃতিকে আরেকটি সিঙ্গেল কলামে ছাপিয়েছে তারা। উপ-সম্পাদকীয়তে জাসদ ও আওয়ামী লীগের দুই নেতার কলাম। তবে ২০১০ সালের যুগান্তরে ৭ নভেম্বরের মূল সংবাদটির শিরোনাম ছিল ভিন্ন রকম- ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস আজ’। এর আগের বছরগুলোয়ও ‘ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বর’-এর পরিবর্তে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ লিখেই শিরোনাম করতো পত্রিকাটি।
এ বছর ডেইলি স্টার ৭ নভেম্বর সংক্রান্ত একমাত্র প্রতিবেদনটি ছাপিয়েছে প্রথম পাতায়। অথচ বিগত বছরগুলোয় পত্রিকাটি একাধিক লেখাসহ প্রথম বা শেষের পাতায় খবর ছাপিয়েছে। ইত্তেফাক শেষের পাতায় এবার ৫ বাক্যে ৬০ শব্দের এক ক্ষুদ্রাকার রিপোর্ট ছাপিয়েছে। অথচ ২০১০ সালে ডাবল কলামে বড় খবরের সঙ্গে একাধিক বিশেষ লেখা ছিল।
সমকাল শেষের পাতায় ও ঢাকা ট্রিবিউন চতুর্থ পাতায় সিঙ্গেল কলাম খবরের সঙ্গে যথাক্রমে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতার দুটি লেখা ছাপিয়েছে। আর জিয়ার ছবিসহ নয়া দিগন্ত প্রথম পাতায় সিঙ্গেল বক্স আইটেমের পাশাপাশি ভেতরে বিএনপির দলীয় ‘বিশেষ ক্রোড়পত্র’ ছাপিয়েছে।
কালের কণ্ঠ শেষের পাতায় ছাপানো ‘ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বর আজ’ শিরোনামে প্রতিবেদনটিতে লিখেছে, ‘এবার পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে কেন্দ্রীয় বিএনপির আয়োজনে আলোচনা সভাটি হচ্ছে না। বুকিং থাকলেও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন কর্তৃপক্ষ গতকাল শুক্রবার তা বাতিল করে দিয়েছে। একই সঙ্গে তারা জানিয়েছে, ওইদিন বিএনপি সেখানে সভা করতে পারবে না।’ লক্ষণীয়, অন্য কোনো পত্রিকা ওই তথ্যটি দেয়নি।